গ্রন্থটির নাম শুনেই বোঝা যায় বর্বর “তাতারী” জাতির ইতিহাস আলোচিত হয়েছে এখানে । তাদের বর্বরতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে গ্রন্থটিতে তা পূর্বের সকল বর্বরতাকে হার মানায়। হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে আবির্ভাব ঘটে “তাতারী” গোষ্ঠীর। যারা জাতি হিসেবে ছিল মঙ্গোলিয়ান। কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী ছিল না তারা। বরং বিভিন্ন ধর্মের সংমিশ্রণে নতুন এক ধর্মের আনুগত্য করতো তারা। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, পুরো বিশ্বে মঙ্গলদের একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং, তারা যে শুধু মুসলিমদের শত্রু ছিল বিষয়টা এমন নয়, বরং যেকোন মানবজাতির জন্য তারা ছিল রীতিমতো হুমকিস্বরূপ।
তৎকালীন যুগে মুসলিমদের অবস্থা কী ছিল? এ ব্যাপারে লিখতে গেলে কলমের নিব যেন লজ্জায় নিজেকে লুকোতে চায়! আফসোস!
মুসলিম নেতা ও খলীফাদের মাঝে তখন পারস্পরিক বিরোধ,নিজ রাজ্যকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও জিহাদ থেকে পালিয়ে বাঁচার মতো অসংখ্য মন্দ আচরণ বিদ্যমান ছিল।
একজন অপরজনকে সাহায্য করা তো দূরের কথা! বরং তাতারীদেরকে অপর ভাইদের প্রতি উস্কে দিতেও তারা কুণ্ঠিত হতো না। শেষপর্যন্ত পরিণতি যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। একে একে নিজ রাজ্য হারিয়েছে, মানুষের আস্থা হারিয়েছে, মানুষের ধিক কুড়িয়েছে এবং পরিশেষে চূড়ান্ত লাঞ্চনার সাথে বিধর্মীদের পদাঘাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।
লা হাওলা ওয়ালা কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্।
অবস্থা যখন ক্রমশ ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে শুরু করেছিল ; পুরো বিশ্বে তাতারীরা বিস্তার লাভ করতে শুরু করে দিয়েছিল ; একের পর এক বিজয় অর্জন হচ্ছিলো।
ঠিক সে মুহূর্তে আল্লাহর ইচ্ছায় মিশরের রাজ ক্ষমতায় অলৌকিকভাবে আবির্ভূত হন ” হযরত সাইফুদ্দীন কুতয (রহঃ)। যিনি ছিলেন মামলুক বংশের একজন। তাঁর সু-চেতনায় মুসলিম অন্তর আবারো ফিরে পেয়েছিল জিহাদের অনুপ্রেরণা। সকলে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্তুত হতে শুরু করলো তাঁদের হারানো সম্মান ফিরে পেতে। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণকরত জিহাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন কুতয (রহঃ)। মুসলমানরা “আইনে জালুত” নামক স্থানে মুখোমুখি হন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি “তাতারী” বাহিনীর সাথে। আশ্চর্য রণদক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে তাতারীদের পরাজিত করেন কুতয (রহঃ)। মাসটি ছিল ৬৫৮ হিজরীর পবিত্র রমজান মাস। যে মাসে ইতিপূর্বে বদর বিজয়, স্পেন বিজয়সহ আরও অনেক বিজয় মুসলিমদেরকে দান করেছিলেন মহান আল্লাহতালা।
কুতয (রহঃ) দীর্ঘ চল্লিশ বছরের পরাধীনতা কে চূর্ণ করে দিয়ে, তাতারীদের জুলুম থেকে স্বাধীনতার গৌরব উপহার দেন বিশ্ববাসীকে। ইতিহাসের সোনালী পাতায় স্থান করে নেয় “আইনে জালুতের” ঐতিহাসিক যুদ্ধ।
ইতিহাসের অন্যতম অধ্যায় (তাতারী জাতি) সম্বন্ধে জানতে হলে বইটি হতে পারে আপনার কাছে হীরক সমতুল্য।
Reviews
There are no reviews yet.